উপসর্গ কাকে বলে?
উত্তরঃ উপসর্গ নির্দিষ্ট কতকগুলি অব্যয়। সংস্কৃতে প্র, পরা, অপ, সম, অনু, অব, নির, দুর, অতি, বি, অধি, সু, উৎ (উ), অতি, নি, প্রতি, পরি, অপি, উপ, আ (আঙ)--এই কুড়িটি অব্য় যখন ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন এদের উপসর্গ বা 'গতি বলা হয়। পাণিনির মতে, উপসর্গ বাইশটি। কারণ তিনি নিস্’ ও ‘দুস এ দুটিকে আলাদা উপসর্গ হিসাবে গ্রহণ করেছেন। উপসর্গ নিজ প্রভাবে ধাতুর অর্থ পরিবর্তন করে দেয় বা ধাতুর অর্থবৈশিষ্ট্য সম্পাদন করে।
হৃ' ধাতু থেকে নিষ্পন্ন প্রহার, আহার, সংহার, বিহার ও পরিহার শব্দগুলির অর্থ সম্পূর্ণ বিভিন্ন। যেমন—প্রহার =আঘাত; আহার=ভােজন; সংহার=বিনাশ; বিহার=বিচরণ; পরিহার=বর্জন। এভাবে দেখা যায়, একটি মাত্র ধাতুর বিভিন্ন উপসর্গযােগে বিভিন্ন অর্থ হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এ-সব ধাতুরই অর্থ, উপসর্গের পূর্বে স্থাপিত হয়ে ধাতুর এই সকল অর্থদ্যোতনা করে। এজন্য উপসর্গ ধাতুর অর্থের দ্যোতক, বাচক নয়। ব্যাকরণবিদেরা বলে থাকেন 'অনেকার্থা হি ধাতবঃধাতুসমূহ অনেকাথবিশিষ্ট। সেই অনেকার্থকে দ্যোতিত করার কাজটি করে উপসর্গসমূহ। উপসর্গের নিজস্ব অর্থসন্নিপাতের কোন ক্ষমতা নেই। এ-সমস্ত কথাই সংস্কৃত উপসর্গ সম্পর্কে প্রযােজ্য। কিন্তু বাংলা ভাষায় সংস্কৃত উপসর্গ ছাড়াও অন্য উপসর্গের ব্যবহার আছে। সুতরাং বাংলা ভাষার ব্যাকরণে উপসর্গের একটি স্বতন্ত্র সংজ্ঞা নির্দেশ প্রয়ােজন। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বাংলায় উপসর্গের সংজ্ঞা এই রকম।
যে সকল অব্যয়, অব্যয় জাতীয় শব্দ বা শব্দাংশ ধাতুর বা শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়ে ধাতু বা শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় অথবা অর্থের বিশিষ্টতা বিধান করে, তাদের উপসর্গ বলা হয়। উপসর্গ যেহেতু ধাতু বা শব্দের অর্থবৈচিত্র্যসাধনে সহায়তা করে, সেজন্য নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টি করে ভাষার সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য সৃষ্টির জন্য উপসর্গের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। বাংলায় উপসর্গ ত্রিবিধ (ক) সংস্কৃত উপসর্গ, (খ) বাংলা উপসর্গ এবং (গ) বিদেশী উপসর্গ।
0 Comments